শর্ট ভিডিও থেকে আয় করার বিভিন্ন উপায়

 ইউটিউব শর্টস ফেসবুক রিলস, ইন্সটাগ্রাম রিলস,  টিকটক এর মত শর্ট-ফর্ম কনটেন্ট এর জনপ্রিয়তা চলছেই। শুধুমাত্র বিনোদন প্রদানে সীমাবদ্ধ নেই কনটেন্ট ক্রিয়েশন, আয়ের পথও খুলে দিয়েছে প্ল্যাটফর্মগুলো।

বর্তমানে শর্ট ভিডিওর চাহিদা সবচেয়ে বেশি প্রায় যেকোনো প্ল্যাটফর্মেই। এই পোস্টে আমরা জানবো কিভাবে শর্ট ভিডিও থেকে আয় করা যায়। এখানে আমরা প্রতিটি জনপ্রিয় শর্ট ভিডিও প্ল্যাটফর্ম থেকে আয় করার নিয়ম জানবো।

ইউটিউব শর্টস

ইউটিউব শর্টস থেকে আয়ের একাধিক উপায় রয়েছে, তবে সবচেয়ে সেরা উপায় হলো ইউটিউব পার্টনার প্রোগ্রাম। YPP জয়েন করার মাধ্যমে এড রেভিনিউ শেয়ারিং এর অ্যাকসেস পাওয়া যায়। মূলত শর্টস এর আগে, পরে, কিংবা মাঝে দেখানো এড থেকে জেনারেট করা ইনকাম এর অংশ এখানে শেয়ার করা হয়। 

বলে রাখা ভালো  ইউটিউব শর্টস থেকে আয় করতে হলে কমপক্ষে ১ হাজার সাবস্ক্রাইবার এবং ১০ মিলিয়ন শর্টস ভিউ থাকতে হবে শেষ ৯০ দিনে। এছাড়া শেষ ৩৬৫ দিনে ১ হাজার সাবস্ক্রাইবার ও ৪০০০ ঘন্টা পাবলিক ওয়াচ আওয়ার থাকলেও কোনো চ্যানেলকে পার্টনার প্রোগ্রামে যুক্ত করে থাকে ইউটিউব। ইউটিউব শর্টস থেকে প্রাপ্ত রেভিনিউকে ক্রিয়েটর ও মিউজিক ক্রিয়েটরদের মধ্যে ভাগ করে দেয় ইউটিউব। কোনো ক্রিয়েটর যদি নিজের সাউন্ড ব্যবহার করে বা কোনো গান ছাড়াই  ভিডিও তৈরি করে সেক্ষেত্রে ভিডিও থেকে প্রাপ্ত সকল রেভিনিউ ক্রিয়েটর পাবেন।

চ্যানেল গ্রো করা শুরু করলে ও শর্টস থেকে সাড়া পাওয়া গেলে বিভিন্ন ব্র্যান্ডের কোলাবোরেশন ও স্পন্সরশিপ পেতে পারেন। নির্দিষ্ট ফি এর পরিবর্তে  ভিডিওতে তাদের প্রোডাক্টকে প্রোমোট করার মাধ্যমে ইনকাম এর নতুন পথ পেয়ে যেতে পারেন। মনে রাখবেন শক্তিশালী ও এনগেজিং অডিয়েন্স তৈরি করা হল সুযোগ তৈরী করার প্রধান উপায়। ইউটিউব শর্টস থেকে আয় করতে চাইলে আমাদের বিস্তারিত পোস্ট দেখতে পারেন।

ফেসবুক রিলস

বিজ্ঞাপনের পাশাপাশি ব্র্যান্ড কোলাবোরেশন ও অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং এর মাধ্যমে ফেসবুক রিলস থেকে আয় করা যায়। এছাড়া ফেসবুক থেকে আয়ের আরো দুইটি উপায় আছে, ফেসবুক স্টারস এবং রিলস প্লে বোনাস প্রোগ্রাম।

ফেসবুক স্টারস এর মাধ্যমে ভিউয়ারগণ সরাসরি তাদের পছন্দের ক্রিয়েটরকে সাপোর্ট করতে পারবেন লাইভ স্ট্রিমে কিংবা রিলসে “Stars” পাঠিয়ে। ক্রিয়েটরগণ এই স্টারকে সরাসরি ক্যাশ হিসেবে হাতে পাবেন।

এছাড়া সীমিত আকারে রিলস প্লে বোনাস প্রোগ্রাম নিয়ে কাজ করছে ফেসবুক। হাই পারফর্মিং রিলস এর ভিউয়ার মাাইলস্টোন এর উপর ভিত্তি করে ক্রিয়েটরদের পুরস্কৃত করে যাচ্ছে ফেসবুক।

ইন্সটাগ্রাম রিলস

ইনফ্লুয়েন্সার ও কনটেন্ট ক্রিয়েটরগণ ইন্সটাগ্রামে একাধিক উপায়ে আয় করতে পারেন রিলস থেকে। ইন-স্ট্রিম এড এর পাশাপাশি ব্র্যান্ড পার্টনারশিপ ও অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং থেকেও আয় করতে পারবেন ইন্সটাগ্রাম শর্টস রিলস ক্রিয়েটরগণ।

অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং এর মাধ্যমে আয়ের সবচেয়ে সেরা সুযোগ রয়েছে ইন্সটাগ্রাম রিলস থেকে। কোনো প্রোডাক্ট ভিউয়ারদের প্রয়োজনকে মাথায় রেখে উপস্থাপন করতে পারলে এফিলিয়েট ইনকাম এর পাশাপাশি ব্র্যান্ড ডিলসও পেয়ে যেতে পারেন। ইন্সটাগ্রাম রিলস এর ক্ষেত্রে আপনার আয়ের পথকে বিস্তৃত করে একাধিক আয়ের পথ রাখা হওয়া উচিত প্রধান লক্ষ্য।

content maker

🔥🔥 গুগল নিউজে আমাদের সাইট ফলো করতে এখানে ক্লিক করুন তারপর ফলো করুন 🔥🔥

টিকটক

বিনোদন বা নিজেকে প্রকাশের একটি প্লাটফর্ম হলেও ক্রিয়েটরদেরকে কনটেন্ট থেকে আয়ের একাধিক উপায় প্রদান করছে টিকটক।  টিকটক থেকে আয়ের কিছু উপায়ও জেনে নেওয়া যাক।

প্রথমত টিকটক ক্রিয়েটর ফান্ড হতে পারে টিকটক থেকে আয়ের অসাধারণ একটি মাধ্যম। শেষ ৩০ দিনে ১০ হাজার ফলোয়ার এবং ১ লক্ষ  ভিডিও ভিউস আছে এমন যেকোনো টিকটক ব্যবহারকারী তার ভিডিও ভিউস এর উপর ভিত্তি করে পুল-ভিত্তিক রেভিনিউ এর শেয়ার পাবেন। অর্থাৎ আপনার ভিডিও যত বেশি ভিউ জেনারেট করতে পারে, আয়ের সম্ভাবনা তত বাড়বে।

টিকটক থেকে আয় করার সবচেয়ে জনপ্রিয় মাধ্যম হলো ব্র্যান্ড পার্টনারশিপ। ইন্সটাগ্রাম, ফেসবুক বা ইউটিউব এর মত ব্র্যান্ডগুলো ক্রিয়েটরদের সাথে কোলাবোরেশন করে থাকে। প্রোডাক্ট প্লেসমেন্ট, ব্র্যান্ডেড চ্যালেঞ্জ বা হ্যাশট্যাগ ক্যাম্পেইনসহ একাধিক উপায়ে এই কাজ করা যেতে পারে। একজন ক্রিয়েটর রিচ ও এনগেজমেন্ট এর উপর ভিত্তি করে চার্জ করতে পারেন।

এছাড়া  টিকটক সম্প্রতি ক্রিয়েটর মার্কেটপ্লেস চালু করেছে যা ব্র্যান্ড এর সাথে ক্রিয়েটরদের কানেক্ট করবে। ক্রিয়েটরগণ তাদের প্রোফাইল প্রদর্শন করতে পারবে, বিশাল অডিয়েন্সের কাছে পৌঁছাতে পারবে সহজে, যা থেকে ব্র্যান্ড পার্টনারও পেতে পারেন।

এসবের পাশাপাশি  টিকটকে লাইভস্ট্রিম করলে সেখানে ভিউয়ার প্রদত্ত ভার্চুয়াল গিফট থেকে আয় করা যেতে পারে। আবার এখানেও এফিলিয়েট মার্কেটিং এর মাধ্যমে আয়ের সুযোগ তো থাকছেই।

সফলতা পেতে করণীয়

  • কনটেন্ট হচ্ছে কিং: যে প্ল্যাটফর্মেই  ভিডিও আপলোড করুন না কেনো, আপনার লক্ষ্য হওয়া উচিত হাই কোয়ালিটি, এনগেজিং কনটেন্ট তৈরী করা যা ভিউয়ারদের ভালো লাগবে। ট্রেন্ড ফলো করার পাশাপাশি আপনার স্টোরিটেলিং যদি ভালো হয় তাহলে রিটার্নিং ভিউয়ার পাবেন অনেক। ফ্রেশ কনটেন্ট আপলোড করার মাধ্যমে অডিয়েন্স তৈরী করা ও ধরে রাখা সম্ভব।
  • নিয়মিত থাকুন: রেগুলার কনটেন্ট পোস্ট করার মাধ্যমেই অডিয়েন্স তৈরী করতে পারবেন ও এলগরিদম এর সাহায্য পাবেন।
  • কমিউনিটি তৈরি: আপনার ভিউয়ারদের সাথে কমেন্টে বা মেসেজে ইন্টারেকশন বজায় রাখুন, এতে কানেকশন তৈরী হয় এবং কমিউনিটি তৈরী হয় যার কল্যাণে আপনার ব্যক্তিত্বের সাপোর্টারও পেয়ে যাবেন।
  • আপডেটেড থাকুন: বলে রাখা ভালো উল্লেখিত সকল প্ল্যাটফর্মগুলো কিন্তু খুব নিয়মিত মনিটাইজেশন পলিসি ও ফিচার আপডেট করে থাকে। তাই এসব বিষয়ে খবর রাখলে লেটেস্ট সুযোগ সুবিধার ফায়দা পেতে পারেন।
  • সকল প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করুন: উল্লেখিত সকল প্ল্যাটফর্মে একই শর্টস  ভিডিও চাইলেই আপলোড করতে পারেন। অর্থাৎ একবার ভিডিও তৈরী করলে তা প্রতিটি প্ল্যাটফর্মে আপলোড করা যাবে এবং এর থেকে আয়ও করা যাবে। তাই এই সুযোগ ব্যবহার করা উচিত, কারণ বলা যায়না কোন প্ল্যাটফর্মে আপনার একটি কনটেন্ট ভাইরাল হয়ে যায়, যা আপনার ক্যারিয়ারও তৈরি করে দিতে পারে।

মনে রাখবেন শর্ট ভিডিও থেকে ভালো পরিমাণ আয় করতে দরকার সময়, অধ্যাবসায় ও সঠিক প্ল্যানের। আকর্ষণীয় কনটেন্ট তৈরী করে, লয়্যাল অডিয়েন্স তৈরী করে, এবং বিভিন্ন মনিটাইজেশন প্রসেস অনুসরণ করে আপনার শর্ট ভিডিও তৈরীর প্যাশনকে ক্যারিয়ার এর রুপ দিতে পারেন।